বইয়ের নাম ঃ ভোরের শিশির
ধরনঃ উপন্যাস
লেখকঃ নাসরিন তামান্না (বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক)
প্রকাশকঃজোড়া শালিক
'ভোরের শিশির ' এর শুরুতেই একটা চমক আছে। হকারের পুরাতন কাগজপত্রের সাথে পাওয়া গেল কিছু ডায়েরি। কে লিখেছে,কে পেয়েছে এই ডায়েরিগুলো, এই আলোচনায় পরে আসছি। হকারের টুকরিতে থাকা ডায়েরিগুলোর প্রতি এক কৌতূহলী নারীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।তিনি কিনে নিলেন পুরাতন ডায়েরিগুলো।কথায় আছে, "জহুরি জহর চিনে।" অন্যভাবে যদি বলি,"যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।" এই ডায়েরিগুলোর ভেতর পাওয়া গেল এক কিশোরীর সুখ দুঃখের উপাখ্যান। ২০০৮ সন থেকে ডায়েরি লেখা শুরু, ২০১৮ এ শেষ।
সরকারি কলোনীতে বেড়ে উঠা এই কিশোরীর জীবনবোধ অত্যন্ত চমৎকার। আমাদের সমাজে একটা মেয়ে অসংখ্য সমস্যা মোকাবেলা করে বেড়ে উঠে। এই কিশোরীটিও এর ব্যতিক্রম নয়।তার দিনলিপি যেন হাজারো কিশোরীর প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা। কিশোরীটি কখনও খুব বাস্তববাদী, আবার কখনও অতি সহজ,সরল ও বিশ্বাসপ্রবণ। একদিকে সে কলোনীর ছেলে রাজুর প্রেমের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করতে পার না।কিন্তু ঐ শিক্ষকের কাছেই সে প্রতারিত হয়।আবার মোবাইল ফোনে সম্পর্ক হয় আহনাফের সাথে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল ফোনে কথা হয় আহনাফের সাথে। চলে মেসেজিং। পরষ্পরের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ নেই। সম্পর্ক ঘনীভূত হয়।রাজু তখনও আশা ছাড়েনি।আহনাফের সাথে মান অভিমান চললেও শেষ পর্যন্ত আহনাফের সাথেই সম্পর্ক টিকে থাকে।এর মধ্যে মেয়েটির চাকরি হয়।তাদের প্রণয়টা পরিণয় পর্যন্ত গড়ানোর আগেই মেয়েটির শরীরে ধরা পড়ে এক মরণব্যাধি রোগ যা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।পরশেষে আহনাফের কাছে সংরক্ষিত একটা চিঠি উদ্ধারের মাধ্যমে মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়, নাম ইতি।
ইতির স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবার নয়,তা চির ভাস্বর হয়ে আছে আহনাফের হৃদয়ে। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় আমাদের সমাজ,রাজনীতি, ধর্ম, প্রেম সবকিছুর বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।
জীবন প্রবাহের বিচিত্র ও জটিল অভিজ্ঞতা সমূহকে মন্থন করে কোন বিশেষ সৃজন রূপে যার সৃষ্টি তাকেই যদি সাহিত্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে নাসরিন তামান্নার "ভোরের শিশির " অবশ্যই সাহিত্যের সেই উৎকর্ষ ধারণ করে। কাজী নজরুলের একটি বিখ্যাত গানের দুটি কলি দিয়ে শেষ করতে চাই -
"তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন পাতে,
তুমি কান্না পাওয়াও কাননকে গো ফুল ঝরা প্রভাতে। "
মোঃআবদুর রহিম